আর্সেনিকের পরিচয়

 


আর্সেনিকের পরিচয়
আর্সেনিক এলবাম Arsenic alb )
১/ আর্সেনিকের প্রতিশব্দ:-
এসিডাম আর্সেনিকাম
আর্সেনিকাম
সাদা আর্সেনিক
আর্সেনিকাম এসিড
আর্সেনিক ব্লেন্স
আর্সেনিক ট্রায়অক্সাইড

২/ আর্সেনিকের উৎস
সেঁকো বিষ হইতে এই ঔষধ প্রস্তুত হয়। আর্সেনিকের ধাতব পদার্থ ঝলসাইয়া আর্সেনিক এলবাম পাওয়া যায় ।
ইহা সাদা ভারী বিচূর্ণ পদার্থ রুপ লাভ করে অথবা ছোট বড় পিন্ড যে অবস্থাতেই থাকে তাহা কাঁচ ভাঙ্গার মত প্রতীয়মান হয় । ইহা একটি তীব্র বিষাক্ত পদার্থ ।

৩/ ক্রিয়াস্থল  
প্রায় সমস্ত শরিলে আর্সেনিকের বিশেষ ক্রিয়া দর্শে । বিশেষতঃ স্নায়ুমন্ডলচর্মশ্লৈম্মিক ঝিল্লীমূত্রযন্ত্রহৃদপিন্ড ও পাকস্থলীর উপর ইহার প্রাধান ক্রিয়া ।

৪/ জ্বালা-পোড়ায় আর্সেনিক
জ্বালাময় অনুভূতির শ্রেষ্ঠ ঔষধ আর্সেনিকঃ তরুন পীড়া অপেক্ষা পুরাতন পীড়াতেই এরূপ দাহ বা জ্বালা থাকিলে আর্সেনিক উপকরী ! তরুন রোগে এরূপ গাত্রদাহে সালফারই উরকারী ! কিন্তু ওলউঠার ন্যায় তরুন পীড়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয় ! আর্সেনিক সেবন করিলে ওলাউঠার ন্যায় সব রকম লক্ষন সৃষ্টি হয় ! আর্সেনিকের বিশেষত্ব উত্তাপে উপশম এবং ঠান্ডায় বৃদ্ধি ! আর্সেনিক সালফারও সিকেলি কর এই ৩টি ঔষধে জ্বালা থাকলেও বিশেষ কিছু পাথক্য দেখা যায় --- সিকেলিতে আর্সেনিেকর বিপরীত লক্ষন বিদ্যমান ! আর্সেনিকের দাহের বিশেষত্ব হইল উত্তাপে উপশম এবং ঠান্ডায় বৃদ্ধি ! সেই জন্য রোগী গায়ের কাপড় খুলিতে চাহে না ! সিকেলিতে - রোগীর গা বরফের মত ঠান্ডা হলেও সামান্যতম উত্তাপ সহ্য করিতে পারে না ! তাই গায়ের কাপড় দিবা মাত্রই ফেলিয়া দেয়ওলাউঠায় এই লক্ষন দেখিতে পাওয়া যায় ! সালফার - রোগী শুধুমাত্র ঠান্ডা চায় তজ্জ্যন্য গায়ের কাপড় ফেলিয়া দেয় !!!

৫/ আর্সেনিকের বিশেষ লক্ষন
১) মৃত্যুভয় ।
২) ছটফটানি ও এপাশ ওপাশ করা।
৩) সর্ব্বাঙ্গে আগুনে ফোড়ার মত জ্বালা কিন্তু গরমে উপসম।
৪)মধ্যরাতে ও মধ্য দিবা রোগের বৃদ্ধিMid night and mid day) 
৫) নাসিকা দিয়া জলের মত গরম সর্দ্দি।
৬) চিৎ হইয়া শুইতে অক্ষমতা ।
৭) সন্ধেহ প্ররায়ন ।
৮)সবল পিপাসা থাকা সত্ত্বেও ক্ষণে ক্ষণে স্বল্প জলপান ।
৯) জলপান করা মাত্রই বমি ও কখনও পাতলা পায়খানা ।

৬/ শিশুদের বিষেশ লক্ষ
রাত্রে ঘুমের মধ্যে কথা বলেঅল্পতে রাগ করে ও চটিয়া উঠে ।

৭/ আর্সেনিকের মানসিক লক্ষন
মানসিক উৎকন্ঠা ও অস্থিরতারোগী সব সময় স্থান পরিবর্তন করে। একাকী থাকিতে ভয় পায় ।
মৃত্যুভয়আত্নহত্যার প্রবৃত্তিহতাশার জন্য রোগী একস্থান হইতে অন্য স্থানে চলিয়া যায় ।
ইহার রোগী কৃপণহিংসুটেস্বার্থপর এবং ভীরু ।
অগোছাল ভাব এবং বিশৃঙ্খলা দেখিলে রোগী বিরক্ত হয় ।
কাল্পনিক গন্ধ পায় এবং কাল্পনিক দৃশ্য দেখে ।
পানির পিপাসা অত্যান্ত কিন্তু অল্প অল্প পানি পান করে।

৮/ আর্সেনিকের চরিত্রগত লক্ষন
শীঘ্র শীঘ্র শীর্ণতা প্রাপ্তিএকপ্রকার বিশেষ পিপাসাঅস্থিরতামধ্যরাত্রের পর রোগ বৃদ্ধিজ্বালা ।
রোগী অনাবরত ছটফট করে ।
ঠান্ডা লাগা হেতু বেদনা বৃদ্ধি গরমে আরামবোধ ।
বার বার ঠান্ডা পানি পান করিতে ইচ্ছামৃত্যুভয় সবচেয়ে বেশী ।
পাকাশয়ে জ্বালাশীতল ঘর্ম (ঘাম)  তৎসহ অবসাদ ।
শয়ন করিতে কষ্ট  মনে হয় যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হইয়া যাইবে ।
হাঁপানী বা উদরীতে শুইলেই টান এবং তাহার বৃদ্ধি ।
বরফজল প্রভৃতি আহার করার ফলে অর্জীন ও উদারময় ।
নাক দিয়ে জলের ন্যায় সর্দি নিগমন। নাক বন্ধ সর্দিতে নাক প্রায় হাজিয়া যায় ।
ক্ষত উত্তাপে উপসম ।
ঘন হলুদবর্নের শ্বেতপ্রদার  জননেন্দ্রিয়ের যেখানে লাগে সেখানে হাজিয়া যায় ।

৯/ আর্সেনিকের প্রয়োগ ক্ষেত্র
অস্থিরতাদুর্বলতাঅতিশয় জ্বালাপিপাসাকলেরাজ্বরপীড়াটাইফয়েডউদারাময়আমাশায়চক্ষুপীড়াসর্দিকাশিহাচিহাঁপানীহৃৎপিন্ডের পীড়াশোথচর্মপীড়াঅর্শ ক্ষতডিম্বকোষের পীড়ারজঃস্রাবএলবুমেনুরিয়ামৃগী ও মুর্ছা প্রভৃতি পীড়ায় ইহা প্ররয়োগ হয় ।
আর্সেনিকের পিপাসা:- আর্সেনিকের পিপাসা প্রবল কিন্তু একসাথে অনেক জলপান করেনাসামান্য সামান্য জলপান করে ।
অনেক সময় জলপান করা মাত্রই বমি হইয়া যায় ।
পুরাতন পিড়ায় আর্সেনিকে পিপাসা থাকেনা ।

১০/ আর্সেনিকের জ্বালার একটি বিশেষত্ব:-
গরমেউত্তাপ প্রয়োগেগরম ঘরে জ্বালার উপশম এবং ঠান্ডায় জ্বালার বৃদ্ধি। রোগী সেজন্য কাপড় খুলিতে চায়না।
পাকস্থলীর পীড়াক্যান্সারক্ষতপুরাতন পীড়াগর্ভাবস্থায় বমি প্রভৃতির সহিত যদি ছটপটানি ও জ্বালা থাকে তাহলে আর্সেনিক।
তরুন রোগের জ্বালায় আর্সেনিক ও পুরাতন রোগের জ্বালায় সালফার।

১১/ উদরাময় লক্ষন:-
ফলমূলবরফ কিংবা অন্য শীতল দ্রব্য পান করিয়া পীড়া হইলে আর্স উপকারী । রোগীর পেটে অসহনীয় বেদনা হয় ।
বাহ্য সবুজহলদেকালছে জলের মত এবং রক্তাক্তপরিমানে এত বেশী হয় না ।
বাহ্যে অত্যন্ত পঁচাদুর্গন্ধতৎসহ গাত্রদাহছটফটানিপিপাসা এবং পান মাত্র পেটে অসহনীয় বেদানা ।
বমি জলের মতরক্ত মিশ্রিত অথবা লালবর্ণের । রাত দুপুরে রোগের বৃদ্ধি এবং উত্তাপে বেদনার উপশম ।

১২/ আমাশয়ের লক্ষন
মুখে বিস্বাদক্ষুধাহীনতাআহারান্তে হিক্কা ।
খাদ্য দ্রব্য পাকাশয়ে পৌছামাত্র বমন ।
বারবার অল্প অল্প জল পানপ্রবল পিপাসাপাকাশয়ে জ্বালা ।
পাকাশয় স্পর্স করিলে বেদনানুভব ।

১৩/ চক্ষু পীড়া লক্ষ
চক্ষুর পাতা ফোলাযন্ত্রণাসেঁক দিলে যন্ত্রণা কমে ।
চক্ষু হইতে যে গরম জল নির্গত হয় তাহা তীক্ষ্ন স্বাদযুক্ত ।
চক্ষুর ভয়ানক জ্বালা ও যন্ত্রণা থাকে ।
চক্ষুর পাতা লালক্ষতগ্রস্তমামড়ি পড়ে ।
আলোতে তাকাতে পারেনা ।

১৪/ সদি© কাশি লক্ষ
নাক দিয়া জলের মত পাতলা স্রাব নিঃসারিত হয় ।
নাসাপথ সর্বদা অবরুদ্ধকপালে দপদপ করেমৃদু শিরঃপীড়া ও হাঁচিহাঁচি আর্সের প্রধান লক্ষন ।
গরম ও জ্বালাজনক স্রাব। যেখানে লাগে হাজিয়া যায় ।
রোগী দুই প্রহর রাত্রির পর শয়ন করিতে পারে না ।
রোগী। ঘন ঘন কাশিতে থাকেশ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হয়ইহাতে শ্বাসনালী শুষ্ক থাকে ।

১৫/ শোথ এর লক্ষ
হৃৎপিন্ডলিভার বা কিডনীর পীড়া হেতু শোথ ।
প্রথমে চক্ষু ও পায়ে এবং অবশেষে সর্বশরীরে শোথ জম্মে ।
রোগীর অতিশয় শ্বাসকষ্ট উৎপন্ন হয় ।
দুপুর ও রাত্রিতে শ্বাসকষ্ট উপস্থিত হয় ।
অতিশয় পিপাসা থাকে কিন্তু অল্প অল্প জল পান করে ।
ফোলা পায়ে ঘা হইলে সেই ঘা থেকে অনবরত রস পড়িতে থাকে ।

১৬/ চম©পীড়ার লক্ষ
শুস্ক একজিমাচর্মরোগে চর্মের উপর শক্ত টিবলীর মত ফুলিয়া থাকে ।
চর্মপীড়ায় প্রায়ই দুর্গন্ধ থাকেমাথা হইতে কপাল পর্যন্ত প্রায়ই এই একজিমা বিস্তৃত হইয়া পড়ে ।
চুলকানোর পর অসহ্য জ্বালা থাকে ।
শীতল জলে চুলকানি বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়কিন্তু গরমে চুলকানির উপসম ঘটে ।

১৭/ আর্সেনিকের বৃদ্ধি
আক্রান্ত পার্শ্বে শয়ন করিলেবেলা ১ টা হইতে ২ টার মধ্যেরাত্রি দ্বিতীয় প্রহরের পরেঠান্ডায় এবং শীতল বস্তু পানাহারে ।

১৮/ আর্সেনিকের উপশম
মস্তক উঁচু করিয়া শয়নে ও সঞ্চালনে ।

১৯/ আর্সেনিকের পরবর্তী ঔষধ
ক্যামোমিলাক্যাল্ক ফসআর্নিকাবেলেডোনাসাইকিউটাথুজাফসফরাসএপিসনেট্রামসালফলইকোল্যাকেসিস ।

২০/ আর্সেনিকের ক্রিয়ানাশক ঔষধ
নাক্স ভমওপিয়ম. নাক্স মস্কেটসালফারচিনিনাম সলফক্যাম্ফারগ্রাফাইটিসট্যাবেকামভিরেট্রামচায়নাইপিকাকহিপারআয়োডিনমার্কুরিয়াস।

২১/ আর্সেনিকের মায়াজিমের নাম
অ্যান্টিসোরিক
অ্যান্টিসাইকোটিক
অ্যান্টিসিফিলিটিক
অ্যান্টিটিউবার কিউলার ।

২২/ আর্সেনিকের ক্রিয়া স্থিতিকাল  
৬০ দিন হইতে ৯০ দিন ।

২৩/ আর্সেনিকের ব্যবহার শক্তি
২ হইতে সিএম । পাকস্থলীঅন্ত্রকিডনী পীড়ায় নিম্ম শক্তি এবং অন্যান্য পীড়ায় উচ্চশক্তি ব্যবহার্য ।

বিশেষ কথা : ঔষধ প্রয়োগ করার পূর্বে বা আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করুন

লেখা : সংগ্রহ

No comments

Powered by Blogger.